রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
এবার সুনামগঞ্জে তাহিরপুরে এবার বিভিন্ন ডাম্পিং স্তুপে রাখা অবৈধভাবে উক্তোলনকৃত কয়েক কোটি টাকার মুল্যের বালু ইউএনও-র সাথে গোপন সমঝোতা করে বিক্রির আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করেছেন সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চলা একটি বালু খেকো প্রভাবশালী সিন্ডিক্যাট। অতচ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো সম্প্রতি এসব বালু, পাথর, চুনাপাথর সম্প্রতি সরকারিভাবে নিলামে বিক্রির জন্য নিলাম আহবান করার পর ওই সিন্ডিক্যাট তা ভন্ডুল করে দেন। সরকাররিভাবে নিলামে বালু বিক্রিতে ব্যর্থ হলেও এবার সেই সিন্ডিক্যাটকে অবৈধভাবে বালু বিক্রিতে সায় দিলেন খোদ তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বুধবার দুপুরে সিন্ডিক্যাট প্রধান উপজেলা প্রশাসন,থানা পুলিশ, স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের নিকট হতে অবৈধভাবে উক্তোলনকৃত বালূ বিক্রির সবুজ সংকেট পেয়েছেন বলেও গণমাধ্যমকে জানান। এ ধরণের কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড এ প্রতিবেদকের নিকট সংরক্ষিত রয়েছে।
বুধবার জেলা,উপজেলা প্রশাসন থানা পুলিশ ও সরজমিনে এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাম্প্রতিকালে পাহাড়ি ঢল ও ঢলের পুর্বে তাহিরপুরের শান্তিপুরের পছাশইল হাওর, আমতৈল, মাহারাম নদীর শাখা শান্তিপুর, চাঁনপুর, বড়ছড়া,টেকেরঘাট, বুরুঙ্গাছড়া রজনী লাইন, কলাগাঁও, চারাগাঁওসহ বিভিন্ন সীমান্ত ছড়া দিয়ে ভারতের মেঘালয় হতে রাশি রাশি বালু, পাথর ও চুনাপাথর ভেসে আসে। এসব খনিজ বালু পাথর চুনাপাথর এলাকার কয়েকটি সিন্ডিক্যাট ব্যাক্তিগত বাণিজ্যের স্বার্থে স্থানীয় দরিদ্র লোকজনকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন স্থানে ডাম্পিং বা স্তুপ করে রাখেন সময় সুযোগে মোটা অংকের চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে সড়িয়ে নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য। কিন্তু তাতে বাঁধ সাধেন জেলা প্রশাসন ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। এরপর সরকারিদল ঘেষা সিন্টিক্যাটের সার্থে এসব খনিজ সম্পদ বিনা রাজস্ব দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি ডিও লেটার প্রদান করেন সরকারের খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোসহ বিভিন্ন দফতরে।
প্রথমে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ২৭ জুলাই রাতে বিষয়টি গোপন রাখলেও জেলা প্রশাসের চাপে পরদিন ২৮ জুলাই মঙ্গলবার পিটিয়ে নিলাম আহবান করেন। নিলামে শত শত লোকজন উপস্থিত হলেও কৌশলে সরকারি দলঘোষা ওই সিন্ডিক্যাট ভুল তথ্য উপস্থাপন ও নানা রকম উস্কানী দিয়ে নিজেরা এমনকি অন্যদেরও নিলামে অংশ গ্রহন করতে দেয়নি।
এদিকে বুধবার সকাল হতেই চাওর হতে থাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা পুলিশ ও কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিককে মানেজ করে উপজেলার উওর বড়দল ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া ওরপে কিবরিয়া মেম্বার একজন বালু পরিবাহী নৌকার সর্দারের মাধ্যমে মাহারাম নদীর শাখা শান্তিপুর, শান্তিপুর বাজারের পশ্চিমে ,আমতৈল এলাকায়, শ্রীপুরের বালিয়াঘাট ডাম্পের বাজার, দুধের আউটায় কবরস্থান এলাকায়, নবাবপুরে নদীতীরে রাখা প্রতিঘনফুট বালু ২০ টাকা দরে বিক্রির জন্য প্রচারণা করান। এরই প্রেক্ষিতে বিষয়টি জানতে সিন্ডিক্যাট প্রধান গোলাম কিবরিয়া ওরফে কিবরিয়া মেম্বারের ব্যাক্তিগত মুঠোফোন জানতে বুধবার দুপুরে কল করা হলে তিনি অকপটে বালু বিক্রির আয়োজন সম্পন্নের বিষয়টি গণমাধ্যমের নিকট স্বীকার করে বললেন, শান্তিপুরের বালু ডাম্পের বাজারের পাটলাই নদী দিয়ে পরিবহন হবে বড় (বলগেট, ট্রলার) নৌকায় । বড় নৌকায় বালু পৌছানো হবে প্রতি ঘনফুট ২০ টাকা দরে। সার্ভেয়ার কানুনগো ষ্টেক ম্যাজারম্যান্ট করে গেছেন ৬৯ হাজার ঘনফুট বালু আছে শান্তিপুরে। তিনি কথোপকথনের এক পর্যায়ে বলেন, এমপি মহোদয় বলে দিছেন (সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন)। এরপর তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা পুলিশ, দু’জন স্থানীয় সাংবাদিকের সাথে এ ব্যাপারে সরাসরি আলাপ করে বালু বিক্রির সম্মতি নিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
বুধবার এ বিষয়ে জানতে তাহিরপুর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমার সাথে কেউ কোন ধরণের আলাপ করেন নি। বুধবার দুপুরে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহর বক্তব্য জানতে যোগোযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে তিনি এ প্রতিবেদকে বললেন, নতুন করে কেউ বালু উক্তোলন করবে না, নতুনভাবে বালু তুললে আমি ধরবই, স্তুপ করা বালু আছে, আমি নীরব ছিলাম, স্তুপ করা বালু গুলো তো আজ হোক কাল হোক চুরি করে নিবেই। এক পর্যায়ে তিনি কিছুটা অস্পষ্টভাবে উনার সাথে কিবরিয়া মেম্বার কতৃক বালু বিক্রির আলাপের বিষয়টিও স্বীকার করেন। তিনি এও বলেন এমপি মহোদয়ও বলছিলেন স্টককৃত বালুগুলো নেয়ার সুযোগ দিতে। তিনি আরো বলেন, এভাবে বালু উক্তোলন করে স্তুপ করাটা অবৈধ কিন্তু নিয়ম হল নিলামে বালু সরকারিভাবে বিক্রি করা, আসলে আমি নীরব ছিলাম, বলেছি যেভাবে পারেন নিয়ে যেতে কিন্তু আমি তাদেরকে কোন ধরণের লিখিত অনুমতি দেইনি।
একই বিষয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপির বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কিবরিয়া মেম্বার কে আমি তাকে চিনি-ই না, আমি কোন ধরণের বালু অবৈধভাবে নেয়ার জন্য কাউকে বলিনি।
প্রসঙ্গত নবাগত ইউএনও হিসাবে তাহিরপুওে যোগদান করার পরপর পদœাসন সিংহ শান্তিপুরে অবৈধভাবে বালু লুটের সময় হাতে নাতে কিবরিয়া মেম্বার ও হাজি কুদ্দুছ মিয়ার চারটি নৌকা আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অর্ধলক্ষ টাকা (৫০ হাজার টাকা) জরিমানা আদায় করেছিলেন।